রবিবার, ১২ মে ২০২৪, ০৭:২২ অপরাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম :
সেচে বিদ্যুৎ ঘাটতির শঙ্কা, ডিজেল নিয়েও উদ্বেগ

সেচে বিদ্যুৎ ঘাটতির শঙ্কা, ডিজেল নিয়েও উদ্বেগ

স্বদেশ ডেস্ক:

চলতি সেচ মৌসুমে একাধিক সংকট দেখা দিয়েছে সরকারের সামনে। গ্যাস সংকটে বিদ্যুৎ উৎপাদন কম হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। ফলে সেচে পর্যাপ্ত বিদ্যুৎ সংকটের শঙ্কা রয়েছে। একই সঙ্গে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে আন্তর্জাতিক বাজারে জ¦ালানি তেলের দাম অনেক বেশি বেড়ে যাওয়ায় এর আমদানি এবং সরবরাহব্যবস্থা স্বাভাবিক রাখা নিয়ে চিন্তিত বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি)। ফলে কৃষকের ডিজেলের স্বাভাবিক সরবরাহ নিয়েও অনিশ্চয়তা থাকছে। এ অবস্থায় এবারের সেচকালীন পরিস্থিতি সরকারের সামনে এক নতুন চ্যালেঞ্জ নিয়ে হাজির হয়েছে।

বিপিসি বলছে, সাধারণত ফেব্রুয়ারি থেকে মে পর্যন্ত চার মাস সেচ মৌসুম হিসেবে গণ্য করা হয়। এ সময় কৃষিকাজে স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় অতিরিক্ত বিদ্যুৎ প্রয়োজন হয়। একই সঙ্গে প্রয়োজন হয় অতিরিক্ত জ¦ালানি তেল এবং গ্যাসের। তেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের পাশাপাশি কৃষকের ট্রাক্টর, পাওয়ারটিলার, সেচপাম্পসহ বিভিন্ন কাজে জ¦ালানি তেলের অতিরিক্ত চাহিদা থাকে। অব্যাহত বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়াতে চাহিদা বেড়ে যায় প্রাকৃতিক গ্যাসেরও। তবে চলতি সেচ মৌসুমে গ্যাসের সংকটের কারণে গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোয় উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার শঙ্কা রয়েছে। এ ছাড়া গত নভেম্বরে এক দফা ডিজেলের দাম বেড়ে যাওয়ায় সামগ্রিক কৃষিকাজে তৃণমূলের কৃষকদের অনেক খরচ বেড়ে গেছে। দাম বাড়ার ঠিক চার মাসের মাথায় রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে আন্তর্জাতিক বাজারে জ¦ালানি তেলের দাম বেড়ে যাওয়ায় দেশের বাজারে কৃষকের ডিজেল সরবরাহ নিয়ে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে।

সারাদেশে কৃষকদের ফসলের জমিতে সেচ দিতে বিদ্যুৎ এবং জ¦ালানি তেল বিশেষ করে ডিজেলের কোনো বিকল্প নেই। বিদ্যুৎ এবং জ¦ালানি তেলের নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ ছাড়া ব্যাহত হবে ফসল উৎপাদন। ফলে প্রতিবছরের মতো এবারও প্রস্তুতি নিচ্ছে বিদ্যুৎ ও জ¦ালানি বিভাগ। সেচে জ¦ালানি তেল কৃষকের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে দিতে বিপিসিকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে প্রয়োজনীয় বিদ্যুৎ উৎপাদন ও সবরবরাহ নিশ্চিত করতে। বিশেষ করে উত্তরবঙ্গের রংপুর-রাজশাহী অঞ্চলে বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে বড়পুকুরিয়া কয়লাখনি থেকে কয়লা সরবরাহ করে বড়পুকুরিয়ার কয়লাবিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর উৎপাদন বাড়াতে বলা হয়েছে বিদ্যুৎ, জ¦ালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয় থেকে।

এদিকে কৃষকের ডিজেল সরবরাহ নিয়ে বিপিসির চেয়ারম্যান এবিএম আজাদ আমাদের সময়কে বলেন, গত নভেম্বরে বিপিসি ডিজেল ও কেরোসিনের দাম বাড়িয়েছে। প্রতি লিটার ডিজেলে তখন বিপিসির গড়ে ১২ থেকে ১৫ টাকা লোকসান ছিল। ডিজেলের দাম ৬৫ টাকা থেকে বাড়িয়ে লিটারপ্রতি ৮০ টাকা নির্ধারণ করা হয়; কিন্তু এখন আন্তর্জাতিক বাজারে ডিজেলের যে দাম, সেই দামের হিসাবে দেশের বাজারে প্রতিলিটার ডিজেলে এখন ৩৭ থেকে ৩৮ টাকা লোকসান করছে বিপিসি। তিনি বলেন, কৃষকের অন্যতম জ¦ালানি ডিজেল। সেচ মৌসুমে বিপিসি সর্বোচ্চ চেষ্টায় রয়েছে কৃষকদের দ্বারপ্রান্তে ডিজেল পৌঁছে দিতে। তবে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ পরিস্থিতির কারণে আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম আরও বাড়লে সেই ক্ষেত্রে বাংলাদেশের তেল আমদানি ও সরবরাহব্যবস্থায়ও প্রভাব পড়বে।

বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, এ বছর সব ধরনের জ¦ালানির চাহিদা বেড়েছে দেশে। ২০১৯ সালের মে মাসে সেচ মৌসুমে বিদ্যুতের সর্বোচ্চ চাহিদা ছিল ১৪ হাজার ৯৭ মেগাওয়াট, ২০২০ সালে ছিল ১১ হাজার ৯৭৭ মেগাওয়াট। পর্যায়ক্রমে সেটা বেড়ে চলতি বছর সেচ মৌসুমে বিদ্যুতের সম্ভাব্য চাহিদা নির্ধারণ করা হয় ১৫ হাজার ৫০০ মেগাওয়াট। তবে বিদ্যুৎ বিভাগ বলছে, জ¦ালানি সরবরাহের সংকটে চাহিদার বিপরীতে এ বছর গড়ে দেড় হাজার মেগাওয়াট লোডশেডিং হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কারণ আন্তর্জাতিক বাজারে এলএনজির দাম বেশি হওয়ায় এবং দেশের খনিগুলোয় গ্যাসের উত্তোলন কমে যাওয়ায় বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোয় চাহিদা অনুযায়ী গ্যাস সরবরাহ করা সম্ভব হবে না।

এদিকে সেচের মৌসুমে গ্যাসের সম্ভাব্য সর্বোচ্চ চাহিদা নির্ধারণ করা হয়েছে প্রতিদিন এক হাজার ৬০০ মিলিয়ন ঘনফুট। ফার্নেস অয়েলের সম্ভাব্য সর্বোচ্চ চাহিদা ৭০ হাজার ৫০০ টন ও ডিজেলের চাহিদা হবে ৩০ হাজার ৭০০ টন। শুধু সেচের জন্য ২০২১ সালে আলাদাভাবে বিদ্যুৎ প্রয়োজন হয়েছে ২ হাজার ৩১৫ মেগাওয়াট, যা ২০২২ সালের জন্য সম্ভাব্য চাহিদা আলাদাভাবে নির্ধারণ করা হয়েছে দুই হাজার ৩৭৫ মেগাওয়াট। তবে এ বছর সেচকালীন জ¦ালানি তেল সরবরাহ নিরবচ্ছিন্ন হলেও বিদ্যুৎ সরবরাহ নিরবচ্ছিন্ন রাখা কঠিন হতে পারে। বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা আমাদের সময়কে বলেন, চলতি সেচ মৌসুমে গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোয় গ্যাসের সরবরাহ নিশ্চিত করা কঠিন হবে। কারণ ইতোমধ্যে প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার মেগাওয়াট গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র গ্যাসের সরবরাহের কারণে বন্ধ রয়েছে। চলতি বছরের শুরু থেকেই দেশে গ্যাসের সংকট চলছে। বিদেশ থেকে আমদানি করা এলএনজির পরিমাণও কমেছে। ফলে গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যাহত হবে।

সূত্রে জানা যায়, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিভাগ সেচ মৌসুমে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করার বিষয়ে সাম্প্রতিক সময়ে বৈঠক করেছে। বৈঠকে সংশ্লিষ্ট সব সংস্থাকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে যাতে গ্যাস ও জ্বালানি তেলের জোগান অব্যাহত রাখার প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়।

বিদ্যুৎ, জ¦ালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনার মধ্যে রয়েছে- চলতি সেচ মৌসুমে বিদ্যুৎ উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য গ্যাসের সরবরাহ বৃদ্ধি; প্রয়োজনীয় ফার্নেস অয়েল ও ডিজেল সরবরাহ বৃদ্ধি; বিশেষ করে যেসব গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্বিঘ্নে বিদ্যুৎ উৎপাদনে সক্ষম, সেখানে গ্যাস সরবরাহে অগ্রাধিকার দেওয়া। কৃষিকাজে ব্যবহারের লক্ষ্যে চলতি সেচ মৌসুমে জ্বালানি তেল পরিবহনে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া; বিশেষ করে রেলপথ মন্ত্রণালয়, সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ, বিআইডব্লিটিসি, বিআইডব্লিউটিএ ও বিপিসির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) যোগাযোগ করে জ¦ালানি সরবরাহ নিশ্চিত করবে। পিডিবিকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বিপিসি, পেট্রোবাংলা ও বড়পুকুরিয়া কোল মাইনিং কোম্পানির সঙ্গে যোগাযোগ করে বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোয় জ¦ালানি তেল, গ্যাস এবং কয়লার সরবরাহ নিশ্চিত করতে।

এ ছাড়া সেচকালীন পানির সাশ্রয়ী ব্যবহারের লক্ষ্যে অলটারনেট ওয়েট অ্যান্ড ড্রাই পদ্ধতি জনপ্রিয় করতে প্রচার চালানোর কথা বলা হয়। সেচপাম্পে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করার জন্য গ্রিড উপকেন্দ্র, সঞ্চালন লাইন, বিতরণ লাইন ও উপকেন্দ্রসমূহ সংরক্ষণ ও মেরামতকাজ জরুরি ভিত্তিতে সম্পন্ন, ওভারলোডেড সাব-স্টেশনগুলো ও সঞ্চালন লাইন প্রয়োজনীয় সংস্কার করে রাখতে নির্দেশ দেওয়া হয়। তেলভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রগুলোয় কমপক্ষে দুই মাসের জ¦ালানি তেল মজুদ রাখতে বলা হয়।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877